নায়িকার মন খারাপ

সাংবাদিক সাহেব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তিনি আবার এসেছেন নায়িকার বাড়িতে। 

পাঠক, আপনাদের নায়িকার কথা মনে আছে তো?  

তার কথা প্রথম বলেছিলাম নায়িকার বিড়ম্বনা লেখাতে। সেই লেখাটার - লিংক  

************************************************************************************

নায়িকা ম্যাম সাংবাদিক সাহেবকে জরুরী তলব পাঠিয়েছেন। তার নাকি একান্ত কিছু ব্যক্তিগত কথা আছে যেটা তিনি সাংবাদিক সাহেবেকে জানাতে চান। 

সাংবাদিক সাহেব অনেক কষ্টে তার ব্যস্ত কাজের শিডিউলের মধ্যে একটু সময় বের করে, তাড়াহুড়ো করে ম্যামের বাড়িতে এসেছেন। 

এই নায়িকা ম্যাম, হাল আমলের পড়তি নায়িকা। তার হাতে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য কাজ নেই। বক্স অফিসে তার চাহিদা কম। তার উপর আবার বয়সও কম হয়নি, যদিও তিনি সেটা স্বীকার করেননা। নিজের বয়স এবং গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে তার নিজস্ব মতামত একেবারে ভিন্ন। সে কথায় পরে আসছি। 

সংগত কারনেই সাংবাদিক সাহেবের উৎসাহ কম এমন পড়তি নায়িকার ইন্টারভিউ করতে। তবুও তিনি এসেছেন সম্পর্কের খাতিরে। 

এক সময়ে নায়িকা ম্যাম দাপটের সাথে বক্স অফিস রুল করেছেন। সে সময়ে তিনি ঘরে বাইরে প্রচুর ইন্টারভিউ দিয়েছেন। সেই সুবাদেই উনাকে কিছুটা সম্মান দেখানো। 

একজন কম বয়সী মেয়ে ড্রইং রুমে এসে খবর দিলো, ম্যাম একটা ভিডিও কলে আছেন, টলিউডের একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতার সাথে। কথা শেষ হলেই তিনি আসবেন।

সাংবাদিক ডেকে এনে বসিয়ে রাখার পুরানো স্বভাব আর গেলোনা, মনে মনে ভাবলেন সাংবাদিক সাহেব আর খুব বিরক্ত হলেন। 

অবশেষে নায়িকা ম্যামের আগমন ঘটলো। মুখে চড়া মেকআপ, চুলগুলো টেনে নিয়ে মাথার উপর হাই বান, নিয়ন নীল রঙের কাফতান ম্যাক্সির সাথে হাই হিল, হাতে লেটেস্ট মডেলের আই ফোন। 

সাংবাদিক সাহেব উঠে দাঁড়াতেই তিনি সোফায় বসে পড়ে চমৎকার একটা হাসি দিয়ে ইশারায় সাংবাদিক সাহেবকে বসতে বললেন। 

সাংবাদিক কথা শুরু করতে যাবেন এমন সময় ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনে তার পিলে চমকানোর জোগাড়। কম বয়সী অ্যাসিস্ট্যান্ট মেয়েটি কোলে করে শুভ্র সাদা রঙের একটি ছোট্ট কুকুর নিয়ে এসেছে এবং প্রানীটিকে নায়িকা ম্যামের হাতে দিলেন। 

নায়িকাঃ "ও মন্টি, মাই কিউট বেবি, আর ইউ মিসিং মি?...জানেন তো, মন্টি আমাকে ছাড়া একদন্ডও থাকতে পারেনা। সকাল, বিকাল দুইবেলা আমি ওর সাথে অনেকক্ষণ সময় কাটাই" - নায়িকা ম্যামের উক্তি। 

সাংবাদিকঃ তাই নাকি?। কি দারুণ। এটা কি ধরনের কুকুর ম্যাম?

নায়িকাঃ এটা জার্মান পুডল। অনেক ছোট হয় সাইজে এবং ভীষণ শান্ত। তুলতুলে নরম ওর গা। খুব নিরীহ প্রকৃতির। কোলে নিবেন? 

সাংবাদিকঃ না, না, ঠিক আছে। 

কুকুরেরও এতো জাত শ্রেণী আছে নাকি, মনে মনে ভাবলেন সাংবাদিক। মনুষ্য সমাজে এতো শ্রেণীবিভেদ,  বিভাজন, দ্বন্দ্ব। কুকুরেরটা খোঁজ করার সাংবাদিকদের সময় কোথায়। 

যাই হোক, সাংবাদিক সাহেব নায়িকা ম্যামের সাথে কথোপকথন শুরু করলেন। 

সাংবাদিকঃ ম্যাম, আমায় ডেকেছিলেন। কি যেন কথা আছে আপনার। অনেক দিন পর আমরা বসলাম।  কেমন আছেন ম্যাম?

নায়িকাঃ আছি একরকম, মন খুব খারাপ। আমায় ইদানিং আর কেউ চিনেনা। ভক্ত, অনুরাগীরা এখন অন্যদের নিয়ে ব্যস্ত।  

সাংবাদিকঃ আসলে যেটা হয়েছে, নিত্য নতুন অভিনেতা, অভিনেত্রী প্রতিনিয়ত সিনেমা জগতে আসছে। তাই নতুন ও নবীনদের ভিড়ে, পুরনো ও প্রবীণদের টিকে থাকা একটু মুশকিল হয়ে পড়ছে। 

নায়িকাঃ কি যে বলেন। হতে পারে আমি একটু পুরনোদের দলে পড়ে গিয়েছি। সময় তো কম হলোনা, প্রায় তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে অভিনয় করছি। 

কিন্তু কে বলল আমি প্রবীণ? কিই বা বয়স হয়েছে আমার। প্রায় শুনি, আমার থেকে জুনিয়ার মেল আর্টিস্টরা আমার সাথে সিনেমা করতে ইচ্ছুক। 

সাংবাদিকঃ তাহলে আর বাঁধা কোথায় ম্যাম? 

নায়িকাঃ মুশকিল তো ওই বুড়ো ডিরেক্টর, প্রডিউসারদের নিয়ে। তারা আমাকে নিতে চায়না। তাদের ধারণা আমি বক্স অফিস মাতাবোনা। 

"এমনটা মনে করার কারণ?" সাংবাদিক অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।  

 নায়িকাঃ দেখুন, এখন দর্শকদের মানসিকতার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দুই ধরনের সিনেমা তারা খায়। 

এক হলো, কোনো রহস্য থ্রিলার বা মার্ডার মিস্ট্রি। যেখানে টুইস্টের পরে টুইস্ট থাকবে, তারপরেও সেমি-টুইস্ট থাকবে। গোটা কয়েক খুন, অনেক রক্ত, অত্যাচার, বীভৎস জিনিস আর গল্পের শেষে ২য় পর্ব বা সিকোএল বানানোর সম্ভাবনা থাকবে। 

অন্য ধরনটা হলো, ভূতপ্রেত, অশরীরী আত্মা অথবা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। যেখানে অনেক অনেক ভিজুয়াল এবং স্পেশাল এফেক্ট ব্যবহার করা হবে।  

এই দুই ধরনের সিনেমায় দর্শকেরা আনন্দিত হয়, উত্তেজিত হয়। এই দুই ধরনের কোনোটাতেই আমার প্রোফাইল যায়না।

সাংবাদিকঃ ইন্টারেস্টিং, কেন বলুন তো ? 

নায়িকাঃ জানেন তো, আমি রোমান্টিক ঘরানার চলচ্চিত্র করি। পাহাড় পর্বতে, পার্কে, বাগানে, নায়কের

সাথে নেচে বেড়ানো টাইপ। কোথাও বেড়াতে গিয়ে অনেক লোকজনের মধ্যে আচমকা নায়কের সাথে ধাক্কা, তারপরে প্রেম, বিয়ে, ভালোবাসা টাইপ সিনেমা। 

রোমান্টিক সিনেমা এখন দর্শকদের কাছে বোরিং লাগে। ওসব আর এখন চলে না। প্রথম দেখায় প্রেম, নিঃসার্থ ভালোবাসা এসবের কনসেপ্ট এখন, কি যেন বলে? - ওল্ড স্কুল। ওটাতে গিয়েছেন তো মরেছেন।

সাংবাদিকঃ  সেটা কি করে সম্ভব, ম্যাম? 

নায়িকাঃ  আলবত সম্ভব। এখন সেটাইতো হচ্ছে। মানুষের জীবনে রোম্যান্স করার সময় কোথায়? তারা তো এখন ব্যস্ত পরকিয়া করতে। হাতের কাছে সহজে যাকেই পাওয়া যায়, তার সাথে। 

অফিসের পার্সোনাল অ্যাসিস্টান্ট, কাজের জায়গার কলিগ, ক্লাসের ছাত্রী, পাশের বাসার ভাবী, কাজের বুয়া, বাড়িওয়ালা চাচা, বাবার বন্ধু, যে কারোর সাথে সস্তা জাতীয় প্রেম। পরকিয়ার সময় মানুষের অদ্ভূত রুচিজ্ঞানের বিচিত্রতা প্রকাশ পায়।  

অনেক দম্পতি আবার পারস্পরিক সমঝোতায় স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পরকিয়া করে। অন্য কারোর সাথে খানিকটা সময় কাটানো, কিছুটা লেনদেন, তারপর আল্লাহ্‌ হাফেজ, বাই বাই।  এতে তাদের দাম্পত্য সম্পর্কে কোনো অসুবিধা হয়না। এটাকে তারা ব্যক্তি স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ বহিঃপ্রকাশ মনে করে। আধুনিকতার প্রতীকীকরণ মনে করে।  

দর্শক আর আগের মত রোম্যান্টিক সিনেমা পছন্দ করেনা - নায়িকার দীর্ঘশ্বাস।

সাংবাদিকঃ এটা নিঃসন্দেহে খুব দুঃখজনক ঘটনা। 

নায়িকাঃ এদিকে আপনাদের টেকনোলজি বুমের ঠ্যালায় তো আমার প্রাণ যাবার জোগাড়। 

সাংবাদিকঃ একটু খুলে বলুন তো ম্যাম।

নায়িকাঃ আমার পাঁচ বছরের পুরোনো পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এসে একদিন আমাকে বলল, বেতন বাড়িয়ে দিতে হবে। 

আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেনো? বেতন বাড়াতে হবে কেনো? ভালোই তো চলছে। 

সে বলল, আমি নিজে নিজে গুগল করে, ইউটিউব দেখে অনেক নতুন জিনিস শিখেছি। আমি জেনেছি যে মানুষের বদলে এখন এআই অনেক কিছু বানাতে পারে। তাই সব কিছুতে মানুষের প্রয়োজন হয়না। 

আমি বললাম, এ আই? সেটা আবার কি?

সাংবাদিকঃ ম্যাম, এআই হলো আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কম্পিউটার বা মেশিন যখন মানুষের থেকে শেখা জিনিস মানুষের মত করে ফেলে বা তার থেকেও ভালো করে ফেলে। তখন সেই কাজটা করতে মানুষের প্রয়োজন হয়না। 

নায়িকাঃ এরকমই কিছু একটা বলল মেয়েটা। এআই ব্যবহার করে এখন খুব সহজেই সিনেমা তৈরি করা যায়। নায়িকার চেহারা, শরীর ও কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে সেগুলো দিয়ে কথা বলার, গান গাওয়া, নাচার দৃশ্য তৈরি করা যায়। তাতে শিল্পীদের মতামত থাকুক বা না থাকুক। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নায়ক নায়িকার উচ্চারণ উন্নত করা যায়, সূক্ষ্ম ভাবে চেহারার পরিবর্তন করা যায়। 

বুঝলেন তো, এই প্রযুক্তি যত উন্নত হবে, আমাদের জীবন ও জীবিকার উপর তত আঘাত হানবে। 

তৎক্ষণাৎ আমি ভাবলাম, এগুলো শিখে মেয়েটার কি লাভ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই মেয়ে, তোমার আসল মতলব কি বলোতো?

মেয়েটা চোখ নাচিয়ে বলল, আমি ইন্টারনেট থেকে এআই ব্যবহার করে সিনেমা বানানো শিখছি।। আমি এখন নতুন চাকরির জন্য চেষ্টা করতে পারবো। আমি একজন ডিরেক্টরের সাথে কথাও বলেছি। উনি আমাকে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ করার ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছেন। শুটিং এর সময় সেটে উনাকে সাহায্য করবো, প্রোডাকশন শিখবো। আর প্যাক আপের পরে ডিরেক্টর সাহেবকে মনোরঞ্জন করতে হবে। 

এই যেমন ধরেন, ফ্রেন্ডস উইথ বেনেফিট। এতে দুই পক্ষের লাভ। 

সাংবাদিকঃ কি সাংঘাতিক কথা। ঐ মেয়েটাকে কি এখনও আপনার সাথে আছে? 

নায়িকাঃ এক মাসের নোটিশ দিয়েছে। এর মধ্যে আমার অন্য লোক খুঁজে বের করতে হবে।  এই হলো আমার বর্তমান অবস্থা। কোথায় যাই বলেন।

সাংবাদিকঃ ম্যাম আপনি ইদানিং কি করে সময় কাটান? 

নায়িকাঃ এই তো বিভিন্ন টক শো, ট্যালেন্ট শো, রিয়ালিটি শোতে গেস্ট হিসেবে ডাক পেলে যাই। সাজানো এপিসোডে অংশগ্রহন করি। সাজানো সেটে,  সাজানো কথা বলি। ভাঁড়ামো, ফাজলামো, অশ্লীল কথাবার্তা দিয়ে মনোযোগ আকর্ষনের চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে আমার করা পুরানো সিনেমার গানের সুরে প্রতিযোগীদের সাথে নেচে দেখাই।

আমাদের নায়িকাদের ভাবসাব তো জানেন। আমরা বয়সে বুড়ি হলেও মনের দিক থেকে ছুড়ি থাকি। তাই বড় পর্দা ছেড়ে চলে যাবো এটা কল্পনাতেও ভাবতে পারিনা। যেভাবে পারি টিকে থাকবো। অভিনয় করে হোক, আইটেম নাম্বার করে হোক, বয়সে ছোটো নায়কদের সাথে প্রেম করে হোক, বাচ্চার জন্ম দিয়ে হোক, বিবাহ বিচ্ছেদ করে হোক, সব সময় আমাদের নিউজ হেডলাইনে থাকতে হবে।  

সিনেমায় সুযোগ না পেলেও অন্য কোনো ভাবে ভক্তদের হৃদয়ে বেঁচে থাকতে হবে। দর্শকদের মনে নিজেদের আজীবন ধরে রাখার চেষ্টা আর কি।  

এই Look-At-Me ওয়ার্ল্ডে আমাদের নিজের জায়গা নিজের বানাতে হয়। নতুন কোনো নায়িকা এলে আমাদের জায়গাটা আরো সংকীর্ণ হয়। এ যুগের নায়িকারা খুব সহজেই ছোট কাপড় পড়ে নাচতে পারে, খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় করতে পারে। 

আপনাদের ভাষায় জেন-জি  না কি যেন বলে। জেন-জি মেয়েদের সাথে আমরা কুলিয়ে উঠতে পারছিনা। তারা রূপে গুনে বিদ্যা বুদ্ধিতে পারদর্শি, টেকনলজিতে পারদর্শি। সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই প্রচুর নায়িকার সন্ধান পাওয়া যায়। তারা এফডিসি ফ্লোরে না থাকলেও, ফেইসবুক, ইন্সট্যাগ্রাম, টিকটকের পর্দায় সাবলীল ভাবে  অভিনয় করে, গান গায়, নেচে বেড়ায়। তাদের ভক্তকূলের সংখ্যা ও অনেক।     

অনবরত ছুটে চলা এই নায়িকা রেসে আমরা ভীষণ ভাবে পিছিয়ে পড়েছি। প্রতিদিন নতুন কেউ না কেউ এসে যোগ দিচ্ছে। তাই সব কিছু মিলিয়ে আমার মন ভালো নেই।  

ভালো হলো, মন খুলে আপনার সাথে একটু গল্প করলাম।  আমার কথা মন দিয়ে শোনার জন্য আপনাকে আবারো ধন্যবাদ। 

যাই হোক, আমাকে এখন উঠতে হবে। আমি এখন ফেইসবুক লাইভে যাবো... 

সাংবাদিকঃ কি নিয়ে লাইভে যাবেন ম্যাম? 

নায়িকাঃ ও, আপনাকেতো বলতেই ভুলে গেছি। আমার মন্টির জন্মদিন সেলিব্রেশন করবো আমার ফার্ম হাউসে। অল্প কিছু গেস্ট আসবে, ক্লোস ফ্রেন্ডস। 

মন্টি আবার বেশি ভিড়ভাট্টা সহ্য করতে পারেনা। ওর অ্যাংজাইটি হয়। আমার থেকে অ্যাটেনশন না পেলেতো রীতিমত ডিপ্রেশন হয়। 

মানুষের ভিড়ে কুকুরের অ্যাংজাইটি  হয়??...সাংবাদিক সাহেব কিছুক্ষণ হাঁ করে থাকলেন। তিনি হাসবেন না কাঁদবেন বুঝতে পারলেন না।

Comments

  1. ইয়াসমীন রহমানApril 28, 2025 at 2:54 AM

    খুব উপভোগ করলাম লেখাটি। রম্য রচনার মাধ্যমে বর্তমান সমাজের চিত্র নিপূন ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। লেখিকাকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

    ReplyDelete
  2. This was a very interesting & and entertaining read. Thoroughly enjoyed reading the true reflection of our rapidly changing society

    ReplyDelete

Post a Comment