বইঃ এআই কন্যা, একুশে বইমেলা ২০২৫
আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের কল্পনাকে হার মানাচ্ছে। বর্তমান সময়ের সব চাইতে আলোচিত বিষয় এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স, যা তথ্য প্রযুক্তি বিজ্ঞানের এক অভিনব সৃষ্টি। কোডিং করার মাধ্যমে যখন একটি কম্পিউটার সিস্টেম বা মেশিন নিজে নিজেই ডাটা থেকে শিখতে পারে এবং মানুষের মত বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করতে পারে তখন আমরা তাকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে থাকি।
এআই তৈরী হয়েছে ন্যানো টেকনোলজির মাইক্রোচিপ দ্বারা
যা কিনা গবেষণা ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত উন্নত করা হচ্ছে এবং মানব সমাজের বিভিন্ন
খাতে কাজে লাগানো হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা,
ব্যবসাবাণিজ্য, গবেষণা, সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যম সর্বক্ষেত্রে এখন আমরা এআই এর ব্যবহার দেখছি।
এক্ সময়ে অ্যামাজন কোম্পানির ‘অ্যালেক্সা’ এবং অ্যাপেল
কোম্পানির ‘সিরি’ এআই জগতে ভীষণ ভাবে সাড়া ফেলেছিলো। তাদেরকে দেয়া নির্দেশ খুব নিখুঁত
ভাবে তারা গ্রাহকদের জন্য পালন করতো এবং গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা করে থাকতো।
তারপরে এলো এআই এর সাড়া জাগানো অ্যাপলিকেশন, ভাষা মডেল বা জিপিটি। চ্যাট জিপিটি একটি ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং মডেল
যা কিনা যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম। আমাদের সমাজে কমিউনিকেশন মোড হিসেবে যা
ব্যবহৃত হয় সেসব তৈরিতে এটি পারদর্শী যেমন ইমেইল, চিঠি, প্রবন্ধ, রচনা, ব্লগ, এমনকি
গল্প, গান, কবিতা, অনুবাদ অথবা গবেষণার রিপোর্ট তৈরি করতে এটি জানে। চ্যাট জিপিটি নিজের
প্রোগ্রামিং কোড নিজে লিখতে পারে।
এখানেই শেষ নয়। যত দিন যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
আরো শক্তিশালী হচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে আলোচিত জেনেরেটিভ এআই তার
একটি প্রমাণ। জেন এআই হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক নতুন রূপ,
যা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ডাটা থেকে নতুন
বিষয়বস্তু তৈরি করতে সক্ষম। এই এআই সিস্টেম অনায়েসে অডিও,
ভিডিও, টেক্সট, ছবি, মিউজিক এ ধরনের
বিভিন্ন কন্টেন্ট তৈরি করতে পারে। প্রযুক্তিতে এতো উন্নতি
মানুষের সৃষ্টিশীলতা ও সৃজনশীলতার সংজ্ঞাই বদলে দিচ্ছে।
জুলাই-আগস্ট
২০২৪ এ ঘটে যাওয়া বাংলাদেশের গণ অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ছবি, পোস্টার, ভিডিও
দেখেছি যার অনেকগুলো ছিলো এআই দিয়ে তৈরী। কিছু কিছু সৃষ্টিকর্ম দেখতে এতোই বিশ্বাসযোগ্য যে বোঝাই যায়না যে
ওটা মানুষ নয় বরং এআই মডেল দ্বারা
সৃষ্ট।
শুধু তাই নয়, মানবসমাজ মানসিক
সুস্থতার জন্য এআই এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। জীবনের নানাবিধ সমস্যা ও প্রতিকূলতা
মোকাবেলা করতে কাউন্সেলিং বা মেন্টাল থেরাপির জন্য আমরা এআই থেরাপিস্ট ব্যবহার
করছি যা কিনা যে কোনো অ্যাংজাইটি বা ডিপ্রেশন এর মত
মানসিক দূরাবস্থায় মানুষের সেবায় ২৪/৭ সহায়তা দিবে। এটি
পুংখানুপুংখ ভাবে আপনার কথা শুনবে এবং পরিত্রানের উপায় বাতলাবে তবে আপনি সিদ্ধান্ত
নিবেন যে একটা মেশিনের কাছ থেকে আপনি কোনো পরামর্শ গ্রহণ করবেন
কিনা।
কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা বলছে এআই এর যাত্রা সবেমাত্র
শুরু, সামনে অনেক পথ বাকি। ধারণা করা হচ্ছে আগামি কয়েক বছরে, এআই শুধু মাত্র কথোপকথন
বা কন্টেন্ট তৈরিতে সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন অনলাইন টাস্ক করতে সক্ষম হবে। তাকে দেয়া
যে কোনো সমস্যার স্টেপ বাই স্টেপ সমাধান তৈরি করতে পারবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী
ও গবেষক দল ভয়ার্ত চিত্তে একটা কথা স্বীকার করছে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই উর্ধমুখি
রকেট আগামীতে কখন থামবে বা কোথায় গিয়ে থামবে সেটা তাদের সঠিক জানা নেই। এই ব্যাপারটা
অনেক বোদ্ধাকে ভাবিয়ে তুলেছে। যন্ত্রের উপর এই নির্ভরশীলতা আগামী কয়েক দশকে মানব সমাজে
কল্যান বয়ে আনবে নাকি আনবেনা, সে ব্যাপারেও অনেকে বোদ্ধারা সন্দিহান।
বিজ্ঞানের ব্যাপারে আমার বরাবরই প্রচণ্ড ঝোঁক। তাই
লেখার মধ্যে বিজ্ঞান চলে আসে বারবার। এবারের অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার
উপর ভিত্তি করে বেড়িয়েছে আমার লেখা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘এআই কন্যা’। বইটিতে আছে ভিন্ন
ভিন্ন ধারার পাঁচটি ছোটগল্প এবং প্রতিটি গল্পেই কোনো একজন এআই কন্যা বিদ্যমান। গল্পগুলো
লেখার মধ্য দিয়ে আমার বিজ্ঞানী মন অন্তরদৃষ্টি মেলে দেখার চেষ্টা করেছে, আগামীতে কি
ঘটতে পারে। গল্পগুলোর প্রেক্ষাপট, বিন্যাস হয়েছে অজানা এক অদূর ভবিষ্যতের সময়কে কল্পনা
করে। যার সাক্ষী হতে পারি আমরা অথবা আগামি প্রজন্মের মানুষেরা।
ভবিষ্যত আমাদের জানা নেই, তবে ভাবতে কোনো বাঁধা নেই। যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আরো উন্নতশীল হবে, মানব সভ্যতা ও মেশিন নির্ভরতা আরো সন্নিকটে আসবে; ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর মানুষ সীমাহীন উপকৃত হবে অথবা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হবে, এআই কন্যা তারই একটি কাল্পনিক চিত্র আঁকতে চেয়েছে।
বইটি প্রকাশিত হয়েছে তাম্রলিপি প্রকাশনী থেকে। প্রচ্ছদ
করেছেন চয়ন বাঙ্গালী। বইটি অর্ডার করা যাবে তাম্রলিপির ফেইসবুক পেইজ থেকে অথবা অনলাইন বুকশপ, রকমারি
ডট কমে।
Comments
Post a Comment