নজরবন্দী

আর কেউ আমাকে ভালোবাসুক আর না বাসুক, ওরা আমাকে ঠিকই ভালোবাসে। আর কেউ আমাকে চাক বা না চাক, ওরা আমাকে পাগলের মত চায়। ওরা সারাক্ষন আমার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করতে থাকে। যেন আমার প্রেমে মত্ত। আমাকে না দেখে থাকতেই পারেনা। 

কি করি, বলুন তো?  ওদের হাত থেকে যতই বাঁচার চেষ্টা করি না কেন, ওদের হাত থেকে আমার নিস্তার নেই। 

ওরা সারাক্ষণই আমাকে চোখে চোখে রেখেছে, চোখের আড়াল হতে দেয়না।  

ওদের চোখে আমি নজরবন্দী। 

এই একবিংশ শতাব্দীতে কি এটা কল্পনা করা যায়? কেউ কারোর আশে পাশে লেজুড় এর মত লেগে থাকবে। আমি যেদিকেই যাবো, আমার পিছে পিছে যাবে। 

মনে হয় একবার বলি, আমায় প্লিজ ছেড়ে দাও না ভাই। তোমাদের কি কোনো কাজকম্ম নেই। মনে হল, কোথা থেকে কে যেন বলে উঠলো, তোমার উপর নজর রাখাই আমাদের কাজ। তারপর সুযোগ বুঝে আক্রমণ...

ছোটবেলা থেকেই এমনটা দেখেছি। বাড়ির সবাই একসাথে বারান্দায় বা ছাদে বসে বিকেলবেলায় গল্প করছি । বলা নেই, কওয়া নেই , কোথা থেকে এক ঝাঁক চলে এলো। আর সব মানুষ দেখে শুঁকে আমাকেই তাদের মনে ধরল। কি বিপদ। 

আমি উঠে পায়চারী শুরু করলাম। তাতেও লাভ হলো না। যেখানেই যাই, আমার পিছে পিছে যায়।    

অতিষ্ঠ হয়ে মা'কে জিজ্ঞেস করলাম, বাড়িতে এতোগুলো সদস্য থাকতে আমাকেই কেন? 

মা বললেন, কারো কারো গায়ের রক্তে অনেক সুগন্ধ থাকে। ওরা সেই সুগন্ধে আকৃষ্ট হয়ে সেই মানুষটাকে ছেঁকে ধরে। এমন সুস্বাদু রক্ত খাওয়ার লোভ ওরা ছাড়ে কি করে বলো? কি করবে, ওদেরওতো পেট ভরাতে হবে। 

মজার খাবার এবং বিস্বাদ খাবারের মধ্যে চয়েস দিলে আমরা মানুষেরাও একই কাজ করবো।   

ওদের যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে দৌড়ে পাশের ঘরে গেলাম। সেখানেও এক অবস্থা। অন্যদেরকে বাদ দিয়ে আমাকেই ঘিরে ধরছে। আর একটু পর পর অসহ্য যন্ত্রণা দিচ্ছে,  হুল ফুটাচ্ছে। 

শরীরে কামড় দেয়ার সাথে সাথে ওগুলো চুলকাতে আরম্ভ করে। তারপর আস্তে আস্তে ব্যাথা শুরু হয়। সেই সঙ্গে ফুলে শরীরে গোটা গোটা হয়ে যায়। সেই গোটা গোটা ক্ষত কমতে কয়েক দিন পর্যন্ত লেগে যায়। আর কমে যাওয়ার পর  বাজে এক ধরনের দাগ চামড়ায় থেকে যায়।

এই হলো আমার প্রতি তাদের ভালোবাসার নিদর্শন।  এরকম নিখাদ ও সুদৃঢ় ভালোবাসা আজকের যুগে খুব কমই পাওয়া যাবে। 

এদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার কোনো উপায় আমার জানা নেই। যেই দেশে যেই অঞ্চলে যাই না কেন, ওদের কেউ যদি ওখানে থেকে থাকে, কেমন করে জানি তারা খবর পেয়ে যায়। আমার ভালোবাসার টানে সাথে সাথে আমাকে খুঁজে বের করে। 

ঘরের ভিতর, ঘরের বাহির, বেডরুম, ড্রইংরুম, বাথরুম, বারান্দা, ছাদ, লিফট, গাড়ী সবখানে একই অবস্থা। কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলেও একই ঘটনা ঘটে। অনেক রকমের মলম, স্প্রে, রিস্ট ব্যান্ড ব্যবহার করেছি। কোনো লাভ হয়নি। 

আমি এই প্রেম থেকে মুক্তি চাই। আমার বন্ধুদের হাত থেকে পরিত্রাণ চাই। কেউ কি বলে দিবে, কিভাবে আমি আমার বন্ধুদের, শত্রু হতে পারি।

কেউ কি বলে দিবে, মশার হাত থেকে বাঁচার উপায় কি?  

বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে, মশার জন্ম প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর আগে যখন প্রাগোইতিহাসিক ডাইনোসরেরা পৃথিবীতে একচ্ছত্র বিরাজ করতো। তবে সে সময়ের মশারা ছিল এখনকার চাইতে তিন গুণ বেশী বড়। 

যিনি প্রথম মশা আবিষ্কার করেন তিনি অনুধাবন করেন যে ম্যালেরিয়া রোগ বিস্তারের ক্ষেত্রে একমাত্র মশা নামক এই প্রাণীটি দায়ী।

সারা দুনিয়াতে ৩৫০০ প্রজাতির মশা বিরাজ করে। তবে বাংলাদেশে এডিস মশার আধিপত্য বেশী। দেশে ম্যালেরিয়া ছাড়াও, মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর শিশু সহ অনেক মানুষের প্রানহানি ঘটে। বাংলাদেশে বৃষ্টির মৌসুমে প্রচন্ড আদ্র আবহাওয়ায় মশার উৎপাত বাড়ে।

এতো ছোট একটা প্রাণী। অথচ এতো অসীম তার ক্ষমতা। যার দিকে একবার তাদের কুনজর পড়েছে, সে সারা জীবনের জন্য তাদের বন্দী - নজরবন্দী। 

***************************************************************************************

****যতবার ঢাকায় আসি, মশাদের অত্যাচারে আমি পাগল হয়ে যাই। তার উপর আবার ওদের রেখে যাওয়া চিহ্ন, সারা শরীরে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। তাই আমার বড় আপু এবার ঢাকায় থাকাকালীন আমাকে একটা আইডিয়া দিলো.....এতো কিছু নিয়ে ব্লগ লেখো, মশাদের নিয়ে একটা ব্লগ লিখোনা কেনো? 

ব্যস, লিখে ফেললাম একটা ব্লগ।****     

Comments

Post a Comment