বইঃ একটু কথা ছিল, একুশে বইমেলা ২০২৪
বর্তমান যুগ, প্রচারণার যুগ। আমরা মানুষেরা নিজের কথা বলতে সব সময়ই ব্যতিব্যস্ত। প্রচারণা, পাবলিসিটি, অ্যাডভার্টাইজিং, মার্কেটিং, এগুলোর এক সহজাত বিদ্যা ও বুদ্ধি দিয়ে আমরা নিজেদের খুব সহজেই পারদর্শী করে ফেলি। তার উপর যদি হয় এই একবিংশ শতাব্দীর সাথে তাল মিলিয়ে চলা, তাহলেতো কথাই নেই। কে কার থেকে এগিয়ে যাবো, এই চিন্তায় আমরা সদা মশগুল। আমরা প্রতিনিয়ত ব্যস্ত নিজের কথা বলতে, নিজের কথা শোনাতে, নিজের ঢেঁড়া পেটাতে।
আমাদের এই প্রচারণা কার্যক্রমে সবথেকে মুখ্য ভূমিকা পালন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এই ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এ আমাদের জুড়ি মেলা ভার। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের তুলে ধরছি, পোস্ট দিয়ে চলেছি। পেয়ে যাচ্ছি লাইক, লাভ, কমেন্টস। যারা সামাজিক ইনফ্লুএনসার আখ্যা পান, তারা সর্বদাই ভক্তদের মনেপ্রাণে বিরাজ করেন। অসংখ্য ফলোয়ারস তাদের ফলো করে। তাদের একটা পোস্ট এর আশায় অপেক্ষার প্রহর গোনে।
আমার এই বইটি আত্মকথন মূলক বই। বই এর নাম ‘একটু কথা ছিল’ তাই স্পষ্ট ভাবে বলে দিচ্ছে। তবে এটি দুটি ভাগে বিভক্ত। আত্মকথন ১ ও আত্মকথন ২।
আত্মকথন ১ – ওদের কথা
একবার ভেবে দেখুন, আমাদের মানুষদের পরিবর্তে যদি অন্য
কেউ কথা বলে ওঠে, নিজের গল্প বলতে শুরু করে, তাহলে কেমন হবে? হাতের মুঠো ফোনটা, ঘরের
কোণের স্যুটকেসটা, আঙ্গুলের আংটিটা, ব্যাগে রাখা টাকা, কিংবা ফেসবুক নিজেই যদি কথা
বলে ওঠে, তখন কেমন হবে? আমরা কি শুনবো ওদের অব্যক্ত কথা? আমরা কি জানতে চাইবো- বছরের
পর বছর, যুগের পর যুগ, মানব সমাজে সেবা দিতে দিতে হাঁপিয়ে ওঠা ক্লান্ত, বিরক্ত জিনিসগুলো
কি বলতে চায়? যারা না থাকলে আমাদের দৈনন্দিন জীবন চলেনা, যারা না থাকলে আমাদের বেঁচে
থাকা অর্থহীন সেই সব প্রাণহীন, বোবারা কি বলতে চায়। আমাদের সম্পর্কে ঐ সব জিনিসগুলোর
মতামত, অনুযোগ, অভিযোগ, অভিব্যক্তি।
জড় জগতের মাঝে যদি প্রাণের সঞ্চার করা হয়, তাদের মন ও মানসিকতা বুঝতে যদি তাদেরকে কথা বলতে দেয়া হয়, ব্যাপারটা কেমন হবে। সেই চিন্তাধারা থেকেই এই ব্যতিক্রমধর্মী, আত্মকথন মূলক গল্পের সংকলন। বলাই বাহুল্য, এই গল্পগুলো সম্পুর্ন ভাবে আমার নিজস্ব চিন্তা ও কল্পনার রঙে রঞ্জিত।
প্রকৃত অর্থে এই গল্পগুলোর মধ্য দিয়ে আমি আমাদের সমকালীন জীবন, জগত, মানসিকতা ও পারিপার্শিকতার একটি সময়োপযোগী ও কালনির্ভর চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এগুলোর মধ্যে দিয়ে আমরা মানুষেরা জানবো, যাদের সাথে আমাদের সহবাস, যে ব্যাপারগুলো আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত তাদের দৃষ্টিতে আমাদের অবস্থান।
আত্মকথন ২ – আমার কথা
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মাঝে আকাশ পাতাল তফাত। লেখাপড়া, দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, ভাষা, সংস্কৃতি, ফ্যাশন, খাবার, বিনোদন, ব্যবসা বাণিজ্য, রীতিনীতি, সব কিছু আলাদা। আমেরিকার মাটিতে আমার দ্বিতীয় জীবন শুরু একত্রিশ বছর আগে। উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় এই মার্কিন মূলুকে এসেছিলাম, তারপর এখানে পরিপূর্ণ ভাবে স্থায়ী নিবাস গড়েছি। এই লম্বা সময়ে জীবনকে দেখেছি নানা দৃষ্টিকোণ থেকে, হাসি কান্নায়, আনন্দ বেদনায়, সফলতা আর হতাশার মধ্য দিয়ে।
দ্বিতীয় পর্বের গল্পগুলোয় আছে দীর্ঘ দিন প্রবাসে থাকাকালীন আমার অভিজ্ঞতার কথা। প্রাচ্যের চিরপরিচিত পরিবেশে বেড়ে উঠে, পাশ্চাত্যের দুনিয়াতে থাকতে আমার কেমন লাগে, তারই অনুধাবন ও পর্যবেক্ষন রয়েছে এই আত্মকথন সংকলনে। এই গল্পগুলো আমার জীবনে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা ঘটনারই প্রতিফলন।
একটু কথা ছিল - না বলা না শোনা কথা প্রকাশের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস ও প্রচেষ্টা মাত্র।বইটি বইমেলা ২০২৪ এ তাম্রলিপি প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হবে। এটি পাওয়া যাবে প্যাভেলিয়ন #১৫ তে। আশা করছি, এর ভিন্নধর্মী গল্পগুলো পাঠককূলের ভালো লাগবে এবং তাদের অনুসন্ধিৎসু মনে একটু হলেও সাড়া জাগাবে।
অভিনন্দন আপু। আপনার লেখায় সত্যিই যাদু আছে। এরকম আরো আরো মজাদার লেখা আপনার কাছ থেকে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।
ReplyDeleteবাহ, খুব ভাল। অনেক অভিনন্দন। জড় পদার্থ নিয়ে যে কথা লিখেছো সে ভাবে আমিও চিন্তা করেছি। কর্মক্ষেত্রে যখন Lift বা elevator এ চড়ি, photocopier ব্যবহার করি বা দোকানে, বাড়িতে যে জিনিসগুলো ব্যবহার করি তখন মনে হয় ওরা যদি মানুষ হতো তবে বলতো: বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আর নয়।
ReplyDelete