দূর পরবাসে (বই)
মহান একুশে বইমেলা ২০২২ এ প্রকাশিত আমার প্রথম বই, দূর পরবাসে - লেখার প্রতি আমার অদম্য ভালোবাসার এক নির্ভেজাল প্রতিশ্রুতি। দূর পরবাসে, আমার প্রবাস জীবনের আনন্দ বেদনারই প্রতিফলন। দূর পরবাসের লেখা গুলোতে ফুটে উঠেছে, বহু দিন আগে দেশ ছাড়া এক প্রবাসী বাঙালির প্রবাস জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, সেই সাথে দেশ ও মাতৃভূমির প্রতি হৃদয়ের নিবিড় ভালোবাসা ও আকুলতা।
বইটি পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশে রকমারিতে এই লিংকে
লেখক ও বই পরিচিতির একটি ভিডিও স্লাইড যা তৈরি করেছে, মাসরুক হাসিব ক্রিয়েশন।
**********************************************************************************
আমার বই এর পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
শুনেছি এক কোটির বেশি বাংলাদেশি দেশের বাইরে থাকে। বিশাল একটা সংখ্যা। পৃথিবীর অনেক দেশের জনসংখ্যাই এক কোটি না, আর আমরা সেই পরিমাণ আদম সন্তান রপ্তানী করে দিয়েছি!! প্রবাসে তাই বাংলাদেশী কমিউনিটি বিরল না। বড় শহরে তো বটেই, মাঝারি, এমন কী ছোট শহরেও বাংলাদেশী পাবেন আপনারা, আমরা প্রবাসী বাংলাদেশীরা একে দেশী কমিউনিটি বলে থাকি। কেমন আছেন তারা? কী ভাবছেন? কী খাচ্ছেন, কতখানি অভিযোজিত হয়েছেন ভিন্ন দেশে, ভিন্ন প্রতিবেশে? জীবন বৈরী হয়ে উঠলে কী করেন তারা? এই প্রশ্নগুলো উত্তর আপনারা পত্রিকাতে পাবেন না। অন্তর্জালে বাংলা লেখার সহজলভ্যতার কারণে প্রবাসীরাও লিখছেন, দেশী কমিউনিটির মধ্যে দেশী লেখক সমাজও গড়ে উঠছে আস্তে আস্তে। আমি জিনিসটাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখি। নোয়াখালির গ্রাম থেকেও মিনিটের মধ্যে নেব্রাস্কার ছোট শহরের বাংলাদেশীর জীবনটা এখন দেখা সম্ভব।
আমি নিজেকে ব্লগার মনে করি। ব্লগ অনেকটা ডায়েরির মতোন, ব্যক্তিগত ভাবনা আর পারিপার্শ্বিক এবং তার আড়ালে যা আছে সেগুলো সব উঠে আসে এতে। আমি মনে করি ব্লগ একটা সমাজের চিত্র, এতে খুঁটিনাটি ব্যাপার যেগুলো ধরা পড়ে আর কোন কিছুতে একটা সময়কে অতটা ধরা সম্ভব না। প্রবাসী বাংলাদেশীদের জানতে হলে সবচেয়ে উত্তম তাদের লেখা ব্লগ পড়া। পড়ে শেষ করলাম শিশিরকন্যা জয়িতার প্রথম বই - দূর পরবাসে। বইটার নামই বলে দিচ্ছে দুই মলাটের ভেতরে কী আছে। শিশিরকন্যা জয়িতা আমেরিকাতে আছেন ৩০ বছর ধরে। তিনি আমেরিকার ঢাকা শহর নিউইয়র্কে থেকেছেন, থেকেছেন অপেক্ষাকৃত ছোট শহর অস্টিনেও। কাজ করেছেন কর্পোরেশনে, সন্তান বড় করেছেন, সংসারধর্ম পালন করেছেন। অর্থাৎ একটা জীবনে যা যা অনুষঙ্গ থাকে সবই তাঁর আছে, তাই দূর প্রবাসের জীবনের ৩৬০ ডিগ্রি একটি ছবি তিনি দিতে পারবেন সেই বিশ্বাস আমার বইটা হাতে নেওয়ার আগেই ছিল।
দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া সহজ কাজ না, বহু কষ্ট আর শূন্যতা বয়ে বেড়াতে হয় প্রথম জেনারেশনের বাংলাদেশিদের। আত্মপরিচয়ের সংকট আছে, সেই সাথে আছে পরবর্তী প্রজন্মকে নিজের সমাজ ও জীবন দর্শন চেনানোর সুকঠিন দায়িত্ব। মাছেভাতে বাংগালী জাতি আমরা কিন্তু অবধারিত প্রশ্ন ধেয়ে আসে সন্তানের কাছ থেকে - What is so special about fish? সেই সঙ্গে বাংলাদেশী নারীকে কর্মক্ষেত্রে কী কী প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় সেটাও এই বইতে উঠে এসেছে। টানাপোড়েন আরও প্রখর হয়ে উঠে যখন সন্তান কুকুর পালার আবদার করে, অধিকাংশ দেশি মানুষ যখন কুকুর দেখলে ভয়ে কাঠ হয়ে যান, তখন এই আব্দার কীভাবে মেটানো সম্ভব?
জয়িতা আরও দুই একটা অভিজ্ঞতার কথা লিখেছে যেটার সাথে বাকি প্রবাসীরাও সংযোগ করতে পারবেন। প্যারিসের রাস্তাতে বাংলাতে কথা বলতে শুনে এক প্রবাসী বাংলাদেশীর স্ট্রিট ভেন্ডরের সহমর্মিতার কথা এসেছে জয়িতার বইয়ে একটি অধ্যায়ে। এই অভিজ্ঞতা আমাদের প্রায় সবারই হয়েছে। এক কোটি রেমিটেন্স যোদ্ধা ছড়িয়ে আছে জাপান থেক পেরু পর্যন্ত, এদের প্রায় সবাই পায়ের ঘাম মাথায় ফেলছেন জীবন ও জীবিকার জন্য, ঋদ্ধ করছেন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার। কিন্তু রাস্তায় হঠাৎ বাংলা শুনলে আমরা ভুলে যাই দেশ থেকে বহুদূরে আছি, আমি একবার প্রচণ্ড তৃষ্ণার্ত হয়ে এক বোতল পানি কিনেছিলাম নিউইয়র্কের রাস্তাতে, সেই পানির দাম দিতে আমাকে অনুনয় বিনুনয় করতে হয়েছিল। জয়িতার মতো আমিও জানি না স্বজাতির প্রতি এতো টান আর কোন জাতির মানুষ অনুভব করে কিনা।
বইতে বিভিন্ন কিছু চিত্তাকার্ষক টপিকও উঠে এসেছে, যেমন মৃত্যুর কাছাকাছি থেকে ফেরৎ আসার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি লেখা আছে (ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়), কলম্বাস ডে আর ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিয়ে দুটো অধ্যায় আছে। ৯/১১ এর সময় জয়িতা নিউইয়র্কে কর্মরত ছিলেন, সেই সময়ের অভিজ্ঞতার কথা আছে, আছে ছেলেবেলার ইদ উৎসবের কথাও।
আত্মপ্রকাশের তাগিদ মানুষের মজ্জাগত। আমার মনে হয় এই তাগিদেই গল্প, উপন্যাস, কবিতাসহ যাবতীয় শিল্পমাধ্যমের সৃষ্টি হয়েছে। দূর পরবাসে জয়িতার আত্মপ্রকাশের সূচনা। জয়িতা ভাষা সাবলীল, বাহুল্যবর্জিত। ৩০ বছর পরবাস জীবন একটি বইতে ধরা পড়বে না, জয়িতার কলম (কী বোর্ড বলা উচিত) চালু থাকবে এই বিশ্বাস আমার আছে। আরও অনেক অনেক বিষয় নিয়ে সে লিখবে, প্রবাস জীবনের আনাচে কানাচে ও গভীরে সে প্রবেশ করবে, আরও অনেক অনেক ঋদ্ধ হবে ওর লেখনি এই প্রত্যাশা আমার আছে। আমি সেই অপেক্ষাতে আছি।
দূর পরবাসে প্রকাশ করেছে বাসিয়া প্রকাশনী, প্রচ্ছদ করেছেন দেলোয়ার রিপন। বাংলাদেশে রকমারি ডট কম থেকে কিনতে পারবেন।
~ তাসনীম হোসেন/ ব্লগার/ লেখক, টেক্সাস, ইউএস।
Mashallah. Congratulations. Go ahead in life. Wish you all the best.
ReplyDeleteAlways proud of you
ReplyDelete