হ্যালো ২০২২
গত বছরের ধারাবাহিকতা (হ্যালো ২০২১ - লিংক) বজায় রেখে এই বছরেও লিখে ফেললাম নতুন বছরের শুরুটা, হ্যালো ২০২২। অধীর আগ্রহে আমরা অপেক্ষা করছি ২০২২ কেমন যাবে তা দেখার জন্য।
বছরের শেষার্ধে ভ্যারিএন্টের মাধ্যমে নতুন করে করোনা ভাইরাসের বংশ বিস্তার ও বিভিন্ন দেশে সংক্রমণের জোয়ার বিশ্ববাসীকে আবার ভাবিয়ে তুলেছে। ডেলটা ও অমিক্রনের মত দ্রুত বংশ বিস্তারকারী জীবাণুগুলো কখনো কখনো বুস্টার ভ্যাক্সিনের কঠিন প্রতিরক্ষা দেয়ালকেও অনায়াসে ভেদ করছে। তাইতো মানুষ আরো বেশী সাবধানী হচ্ছে তাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায়, কর্মক্ষেত্রে, সামাজিকতায়। সাবধানতার মাপকাঠি একটু এদিক ওদিক হলেই তারা পড়ে যাচ্ছে কোভিডের খপ্পরে। কোভিডের সাথে বসবাস এখন আমাদের জীবন ধারণের নিউ নরমাল প্রোটোকলের অন্তর্ভুক্ত।
প্যান্ডেমিকের শুরু থেকে সারা দুনিয়া জুড়ে আহার, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থ, প্রযুক্তি, যোগাযোগ, সর্বক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে এবং আরো আসবে এই বছরে। পৃথিবীবাসী তাদের জীবন ধারণের 'তরিকা' গুলো পাল্টাচ্ছে অথবা তাদের 'চাহিদা' ও 'বাসনা' গুলোকে নতুন ভাবে তালিকাভুক্ত করে উপলব্ধি করছে, কোনটার গুরুত্ব কতখানি। তারা তাদের গতানুগতিক চিন্তাধারায়ও পরিবর্তন আনছে। আর কিছু না হলেও, তারা এটা বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে এই চলমান দুনিয়ায় কোনো কিছুর জন্যে 'সময়' থেমে যায়না, জীবন থেমে থাকেনা।আমেরিকার অনেক স্টেটেই এখন স্কুল, কলেজ করার ক্ষেত্রে অপশন মিলছে - ভার্চুয়াল, ইন-পারসন নাকি হাইব্রিড (যেটা ভার্চুয়াল ও ইন-পারসনের সমন্বয়ে গঠিত)। কঠিন বা দরকারি ক্লাসগুলো ইন-পারসন নিয়ে, বাকি অদরকারি গুলো ঘরে বা ডর্মিটরিতে বসে ভার্চুয়াল নিলে ক্ষতি কি। পশ্চিমা দেশগুলোতে অনলাইন গ্রোসারি, অনলাইন ফুড ডেলিভারি, তৈরি খাবার এর সাপ্তাহিক কেটারিং, আরো বেশী মাত্রায় শুরু হয়েছে। ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রী, বাড়ীতে বসা গৃহিণীরা রেডিমেড-মিল এর প্যাকেট খুলে শুধু গরম করেই চালিয়ে দিচ্ছে। তাদের মতে, রান্না করার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ মানুষের জীবনে আছে।
অনেকেই হালকা, পাতলা অসুস্থ হলে এখন 'টেলিহেলথ' এর শরণাপন্ন হচ্ছে। ডাক্তারের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে চিকিৎসা গ্রহণ করা হচ্ছে। অনেকটা আমাদের দেশের মত ফোন করে চেনা, পারিবারিক ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার মতই ব্যাপার ঘটছে।
অনেকে স্থায়ী ভাবে বাসা থেকে কাজ করছে যাতে প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার ঝক্কি থেকে রেহাই মিলে। অনেকে আবার স্থায়ী ভাবে কাজ ছেড়ে দিয়েছে এবং ঘর সংসার, বাচ্চাকাচ্চা পালনের দিকে মনোনিবেশ করছে। এ যুগের তরুণ প্রজন্মরা যারা বিয়েশাদীর কথা চিন্তা করছে অথবা যারা নব দম্পতি - তারা সন্তানসন্ততি নেয়ার মাধ্যমে পরিবার এর ভিত্তি মজবুত করার কথাও চিন্তা করছে। আর কিছু না হোক, তাদের পরিবারের আপন মানুষদের গুরুত্ব ও জীবনে তাদের প্রয়োজনীয়তার মূল্য বুঝতে শিখেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বছরে আমেরিকায় বিরাট অংশে মূল্যস্ফীতি ঘটবে। দৈনন্দিন খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি হবে, বাড়িঘরের দাম আরো বাড়বে, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে বাড়বে খরচের তালিকা। ঘরে বসে হরহামেশা অনলাইন অর্ডার করা এখন অনেক আমেরিকানের প্রতিদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেডএক্স, ইউ পি এস, অ্যামাজন এর মত ডেলিভারি সার্ভিসগুলো এখন দিন, রাত চব্বিশ ঘন্টা মানুষের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে তাদের পছন্দের বস্তু। এই সব স্ফীতির পাশাপাশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি হবে নাকি, সেই ব্যাপারে তারা অবশ্য কোনো নিশ্চয়তা দেননি।
প্রায় দুই বছর ঘরে আটকা থাকার পর আমেরিকানরা এখন নিত্য ভ্রমণে ব্যস্ত। যেই কোন ছুটি হচ্ছে, পরিবার নিয়ে তারা বেরিয়ে পড়ছে অজানা, রোমাঞ্চকর এক গন্তব্যস্থানের উদ্দেশ্যে। ধর্মীয় ছুটি গুলোতে মিলিত হচ্ছে বাব মা, ভাই বোনের সাথে। জীবন তো একটাই। তাই তারা উপভোগ করছে সর্ব সাকুল্যে।
এতো গেলো ঘরের খবর। বাইরের বিশ্বে হচ্ছেটা কি?
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এবং গ্রীন হাউস গ্যাসের দূষণ কমাতে এখন উন্নত দেশগুলোতে ইলেকট্রিক গাড়ী ক্রয় ও ব্যবহারের প্রতি বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশে প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা পাবার জন্যে এখন ঘরোয়া ভাবে চাষাবাদ বা 'ইনডোর ফার্মিং' এর প্রচলন শুরু হয়েছে। এতে যেমন কৃষকদের পরিশ্রম কম হয়, তেমনি ফলনও হয় অনেক বেশী। মোদ্দাকথা, চেষ্টা চালালে সব কাজেরই অন্য উপায় বের হয়।
এবার কিছু খারাপ খবর। এ বছর জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে সারা বিশ্বে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের হতবাক করে দিয়ে সমুদ্রের তলদেশ থেকে 'হুঙ্গা টোঙ্গা আগ্নেয়গিরি' যথারীতি অগ্ন্যুৎপাত শুরু করেছে এবং এর ফলশ্রুতিতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে সুনামির উদ্রেক হচ্ছে। বছরের শুরুতেই মনে হচ্ছে, প্রকৃতি খুব নারাজ।
এতো কিছুর মাঝেও, দুনিয়ার বড় বড় ঘটনাগুলো থেমে থাকবেনা। উইনটার অলিম্পিকস, কমন ওয়েলথ গেমস, ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের মত সাড়া জাগানো ঘটনাগুলো ঠিকই স্থান পাবে। এ ছাড়াও মহাকাশ প্রতিযোগিতায় এ বছর অংশ নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও রাশিয়া। তারা সকলেই চাঁদের বুকে রোবট বা রকেটযান পরিচালনার মত মিশনে সামিল হবে এ বছর।
সকলের সুস্থতা ও রোগমুক্ত জীবন এখন প্রতিটি মানুষের কাম্য। চির পরিচিত পৃথিবীটা আমাদের জন্য পালটে গেলেও, আমাদের জীবন ধারণের ইচ্ছা বা বাসনাগুলো পালটায়নি। আশা ভরসা, ভালোবাসা, সাফল্য, উন্নতি, পরোপকার বা নতুন কিছু আবিষ্কারের মত মৌলিক অর্জনগুলো কখনো থেমে থাকেনি। ভালো কাজের ধারা অব্যাহতি পায়নি।জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ভাষা, নির্বিশেষে সব মানুষের একটাই লক্ষ্য – সামলে নাও, প্রয়োজনে বদলে যাও, তবু এগিয়ে চলো।
তথ্যপূর্ণ এবং সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।
ReplyDeleteSuperb articulation. The blogs which I read everyday from there everyday I get new information. The facts of ''Tele Health'', ''Indoor Farming'', 'purchasing and selling of electric cars for climate change, ''Hunga Tonga Volcano'' all these are new to me, and also I found all those issues interesting. But the Tele Health topic impresses me the most. Really it is a big facility for the citizens of USA. I wish if Bangladesh would have that same system. You have nicely done the write up. Well done!
ReplyDeleteFelt enlightened while reading this informative blog. A great roundup of what has happened and what might we expect from this year.
ReplyDeleteOne thing is certain that as humans we have this innate ability to adapt with any form of changes