পরবাসের বার্তা

সময়ের চাকা বছরের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে উপনীত হয়েছে। ২০২১ সাল শেষ হতে আর দুই দিন বাকি। পেছনে তাকিয়ে ভাবছি কেমন ছিল ২০২১? এ বছরটা কেমন গেলো? 

গত দেড় বছরেরও কিছু বেশী সময় ধরে আমাদের সবার জীবনটা একদম পালটে গেছে। প্রচণ্ড ব্যস্ততা, অসাধারণ যান্ত্রিকতা, সময়ের দ্রুততা সবকিছু কেমন যেন থিতিয়ে গেছে। নতুন কিছু শব্দ কোভিড, প্যান্ডেমিক, করোনা, মাস্ক, কোয়ারান্টাইন, ভেন্টিলেটর আমাদের জ্ঞ্যান ভাণ্ডারে যুক্ত হয়েছে। আমরা অনেকেই নতুন করে ভাবতে শিখেছি। এই জীবনের মূল্য কি, দুনিয়াতে বেঁচে থাকার অর্থ কি, আমাদের জীবনের প্রকৃত মূল্যবান বস্তু আসলে কি, এমন অনেক অসংখ্য ভাবনা ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।   

এই বছরে মার্কিন দুনিয়ার মানুষেরা করোনা ভাইরাসকে জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছে। বছরের প্রায় প্রথম অর্ধেকটা তারা ভীত শংকিত অবস্থায় করোনা ভাইরাসের টিকা দিতে অংশ নিয়েছে। যারা টিকায় বিশ্বাসী নয় বা টিকা দিতে আগ্রহী নয়, তাদের কথা না হয় নাই বললাম। তাদের নিয়ে লিখতে বসবো আর একদিন। বছরের মাঝামাঝি পর্যায়ে, দুই ডোজ টিকা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ককে সঙ্গে নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়ার পরিবারগুলো বেরিয়ে পড়েছিল গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে। পছন্দের জায়গা গুলোতে ভ্রমন করতে পেরে তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে যে না, জীবনটা একেবারে হয়তো বদলে যায়নি। এটাই এখন 'নিউ নরমাল'।  

আসলে, আল্লাহ্‌র দুনিয়াতে তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুই ঘটার নয় আবার তাঁর ইচ্ছাতে সব কিছুই ঘটা সম্ভব। একই দুনিয়ায় কত ধরনের ঘটনা, কত বায়স্কোপ। স্পেস এক্স এর স্যাটেলাইট কন্সটেলেশন খুব নীচু কক্ষপথ দিয়ে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে আর পৃথিবীবাসীর ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এটির দৌলতে আমরা অনায়াসে করতে পারছি ভিডিও কলিং, অনলাইন গেমিং, স্ট্রিমিং, আরো কত কি।  অন্য দিকে, খুব ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস যা খালি চোখে দেখা যায়না, তা সারা দুনিয়ায় বংশ বিস্তারের মাধ্যমে মানুষের জীবন নাশ করছে, তাদের সামাজিক অবস্থানে বিরাট পরিবর্তন আনছে। লেখাপড়া, চাকরী, মিটিং, ডেটিং, সোশ্যালাইজিং, বড় বড় ডিসিশন মেকিং, সবই এখন ঘটছে অনলাইনে, অনস্ক্রিনে। 

দেশে ও বিদেশে এবারের ঈদ উদযাপন ছিলো অনাড়ম্বর, জাকজমক শূন্য। সুস্থ, রোগ মুক্ত জীবন কামনায় অনেকেই প্রতিনিয়ত আল্লাহ্‌র দরবারে নিয়ত করেছে। পরিবারের সুস্থতা কামনা করে অনেকেই ঈদ এর সময় বিশেষ শোকরানা নামায আদায় করেছে। 

যতো দূর মনে পড়ে, এ বছরের শুরুতে হঠাৎ করে বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে গিয়েছিল। চারিদিক থেকে অনেক খারাপ খবর আসছিলো। ২০২১ এর প্রথম দিকে দেশের অনেক খ্যাতনামা, বরেণ্য ব্যাক্তিদের আমরা হারিয়েছি। অনেকেই হারিয়েছে তাদের বাবা-মা, আত্মীয় পরিজন, বন্ধু বান্ধব, শিক্ষক, গুরু, সহকর্মী  কিংবা প্রতিবেশী। পরিবারের আপন কোন সদস্য বিয়োগের নিষ্ঠুর যন্ত্রণায় ছটফট করছে এখনো অনেক বাঙালি।

ইচ্ছা ছিলো গ্রীষ্মের ছুটিতে দেশে যাওয়ার। কিন্তু তখন দেশে করোনার জোয়ার এতোই তীব্র আকার ধারণ করেছিলো যে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হয়েছিল। অতঃপর, ফল সিজন এর মাঝামাঝি দেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং তিন সপ্তাহের কিছু বেশী সময় দেশে থেকে এলাম। এবার দেশে যাওয়ার প্রথম ও প্রধান কারন ছিল মা এর সাথে দেখা করা, মা এর সাথে সময় কাটানো। প্রায় দেড় বছর ধরে মা আমাদের পথ চেয়ে বসেছিলেন - কখন তাঁর মেয়েরা আসবে। একই সাথে আমার পরিবারের অন্য আপনজনদের সাথে দেখা করাও ছিলো এই ভ্রমণের উদ্দেশ্য। 

দেশে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটা এমনই একটি ব্যাপার যে এটির স্বাদ কখনো ফুরায় না। এটির অভিলাষ কখনোই শেষ হয় না। প্রতিবারই ফেরার সময় মনে হয়, আরো একটু থেকে এলেই পারতাম। সব অনুভূতির কষ্ট গুলোকে উপেক্ষা করে আবার মার্কিনি জীবন যাত্রায় অভ্যস্ত হতে হয়। জীবন এগিয়ে চলে তার নিজস্ব ছন্দে। 

নভেম্বরে দেশে থাকাকালীন, আমার জীবনের বড় একটি ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আর এই ইচ্ছা পূরনে আমাকে আন্তরিক ভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছে বিশেষ ক'জন ভালো মানুষ। যাদের প্রতি আমি চিরতরে কৃতজ্ঞ।  আমার নিয়মিত ব্লগ 'দূরে কোথাও' থেকে প্রিয় কিছু লেখা নির্বাচন করে, একসাথে সংকলন এর মাধ্যমে ছাপা হয়েছে আমার একটি বই। 

লেখালেখির জগতে এটি আমার প্রথম বই, যার নাম দিয়েছি, "দূর পরবাসে"। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বই মেলায় এই বইটি প্রকাশিত হবে। শ্রদ্ধেয় প্রকাশক সাহেব দিনরাত কাজ করে আমার বইটির কাজ সম্পন্ন করেছেন, যাতে আমার অতি ভালোবাসার প্রথম বইটি দেশে থাকাকালীন আমি হাতে পাই এবং আমার মায়ের হাতে তুলে দিতে পারি। 

আমার বইটি পাওয়া যাচ্ছে 'রকমারিতে' -   এই লিংকে  

প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ ছেড়ে হাজার হাজার মাইল দূরের এই আমেরিকার মাটিতে আমার দ্বিতীয় জীবন শুরু তিরিশ বছর আগে। দ্বিতীয় জীবনের প্রথম দিনগুলো কখনো সহজ ছিল, আবার কখনো কঠিন। ভিন দেশকে আপন করে নেয়ার পরীক্ষা ছিল খুবই জটিল ও দীর্ঘ। কখনো পরীক্ষা পাশ করেছি, কখনো অনেক সময় লেগেছে। বিদেশ বিভূঁই এ এই দীর্ঘ তিরিশ বছরের চলার পথের যেমন অনেক স্মৃতি আছে, তেমনি আছে দেশে ফেলে আসা অতীতের অনেক ভালো লাগার কথা। স্মৃতির মণিকোঠায় যে গুলো অনবরত যাওয়া আসা করে। 

দূর পরবাসে, লেখার প্রতি আমার অদম্য ভালোবাসার এক নির্ভেজাল প্রতিশ্রুতি। দূর পরবাসে - আমার প্রবাস জীবনের আনন্দ বেদনারই প্রতিফলন। দূর পরবাসে -  এর লেখা গুলোতে ফুটে উঠেছে, বহু দিন আগে দেশ ছাড়া এক প্রবাসী বাঙালির প্রবাস জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, সেই সাথে দেশ ও মাতৃভূমির প্রতি হৃদয়ের নিবিড় ভালোবাসা ও আকুলতা।  

যারা আমার লেখা পড়তে পছন্দ করেন, আমাকে অনবরত অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দিয়ে সিক্ত করেন, তাদের জন্য রইল আমার উপহার - দূর পরবাসে বইটির একটি কপি। 

সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা!

Comments

  1. 'দূর পরবাসে' বইটি আমার হাতে এসে পড়েছে। খুব আনন্দ লাগছে। অনেক ধন্যবাদ লেখিকাকে। নদীর ধারা যেমন এগিয়ে চলে, তেমনি সাহিত্য যাত্রাও অব্যাহত গতিতে যেন এগিয়ে চলে লেখিকার প্রতি এই কামনা রইলো। নববর্ষের অফুরন্ত শুভেচছা।

    ReplyDelete
  2. Excellent blog post as always. So proud of you for publishing your book. It's the perfect motivation I need to learn to read and write in Bangla!

    ReplyDelete
  3. A massive congratulations..extremely proud of you

    ReplyDelete
  4. Can't wait to read the book my friend. Congratulations!

    ReplyDelete
  5. Super proud of you.... Keep writing!! Congratulations!

    ReplyDelete
  6. Lekhata Khub bhalo laglo…. Chemistry department er Chobi ta Onek happy memory Mone kore diese… keep writing Joyeta …

    ReplyDelete

Post a Comment