শাড়ি কিনতে... একদিন
ম্যাডাম, আর এক হাজার টাকা দিয়ে যান। নাহলে আমাদের অনেক লস হবে।
আর এক পয়সাও নয়। যদি হয় তো সব গুলো প্যাক করেন। খামাখা ফালতু টাইম নষ্ট করবেন না।
আপু, পারলে তো আমি দিতাম।
ও কে ভাইয়া, আসি। আর এক মুহূর্ত নয়।
মহিলা গটগট করে হেঁটে দরোজার কাছে গিয়ে বের হওয়ার সময় পেছন ফিরে বলে গেলো, আপনাদের দোকানে আর আসবো না। ধপাস করে দরোজা পড়ার শব্দ শোনা গেলো।
ওদের মধ্যে একজন বলে উঠলো, ঠিকই আসবে। মার্কেটে নতুন শাড়ি আসলেই কিনতে আসবে। সম্ভবত, লোক গুলোর মধ্যে এই বিক্রেতাই সব চাইতে চতুর এবং বিচক্ষণ। আর শাড়ির দোকানে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার বহু বছরের।
সবে মাত্র শাড়ির দোকানে দরোজা খুলে ঢুকছি আর তখনি এমন একটি দৃশ্য চোখে পড়ল। মনে মনে একটু সংকোচিত হয়ে গেলাম। একেতো আমি দেশে থাকিনা তার উপর আবার এমন ঘাঘু শাড়ি বিক্রেতা, কি করে যে সামাল দিবো তাই আকাশ পাতাল ভাবছি। আমি গিয়েছিলাম গুলশানের পিংক সিটিতে আমার বান্ধবির সাথে শাড়ি কিনতে। কিন্তু শাড়ির দোকানে ঢুকেই এমন ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম।
বাংলাদেশে যতো ধরনের বিক্রেতা আছে তাদের মধ্যে শাড়ি বিক্রেতা সব চাইতে বেশী চালাক ও ধারালো বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন। খুব দ্রুত ক্রেতাদের মন পড়তে পারা এবং তারা কি সিদ্ধান্ত নেবে আগাম তা অনুমান করতে পারা, এদের জন্য খুব সহজ একটি কাজ। যারা শাড়ি কিনতে যায় তাদের পছন্দ, অপছন্দ, চাহিদা, সামাজিক অবস্থান সব কিছুর ব্যাপারে এরা একটা নিখুঁত আন্দাজ করার চেষ্টা করে এবং সেই অনুযায়ী ক্রেতাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়। যাতে শেষ পর্যন্ত এদের অনেকগুলো শাড়ি বিক্রি হয় এবং মোটের উপর অনেক লাভ হয়।
ম্যাডাম, কি দেখাবো? বসেন না, এই যে এইখানটাতে বসেন।
আপনাদের কাছে নতুন কি ডিজাইনের শাড়ি এসেছে দেখান।নতুন তো অনেক কিছুই এসেছে। হালকার উপর না ভারী কাজ?
দুই ধরনেরই দেখান। আমার হাতে সময় খুব কম। একটু তাড়াতাড়ি দেখাবেন।
অ্যাই, সেদিন যে গুলা আসলো ঐ গুলা বের কর। ম্যাডাম, কফি দিতে বলি?
না, না আমরা কিছু খাবোনা। আমাকে গোলাপি রং এর কিছু দেখাবেন না প্লিজ। গোলাপি রং আমি পরি না।
এই গুলাই তো এখন হট চলতেসে। আমি খুলি, আপনি একবার শুধু দেখেন। এই বলে দোকানদার চট করে একটা গোলাপি শাড়ি খুলে তার নিজের গায়ের উপর মেলে ধরে দেখালো।
হায় খোদা, এখন কি আমার দোকানদারের গায়ের সাথে ম্যাচ করে শাড়ি পছন্দ করতে হবে? মনে মনে ভাবলাম আর বললাম,
না, না এগুলা না। আরও ভালো কিছু দেখান। পার্টিতে পরার মত।
কি কি রং দেখাবো আপু? আমাদের কাছ থেকে পিকু, ফলস করে নিতে পারবেন। কোনো সমস্যা নাই।
নীল, বেগুনী বা সবুজ এর উপর দেখান। চিকন পাড়ের, চউরা নয়।
আপু কয়টা নিবেন?
পছন্দ হলে আর ভালো দাম দিলে, কয়েকটা নিতে পারি। যদিও শাড়ি আমার অত পরা হয়না, দাওয়াত ছাড়া।
আপু কি আমেরিকা না লন্ডন থাকেন?
প্রশ্নটা শুনে হকচকিয়ে গেলাম। এই লোক কি করে টের পেল? জিজ্ঞেস করলাম, আমি বাইরে থাকি আপনাকে কে বলল?
আপু, আমাদের বলতে হয়না। আমরা বুঝতে পারি। প্রতিদিন এতো লেডিস দেখি আর কথা বলি যে আমাদের বুঝতে ভুল হয়না।
আমি হেসে বললাম, এতই যদি বুঝতে পারেন তাহলে আমার কোন ধরনের শাড়ি পছন্দ সে গুলা বের করে দেখান। আর দামাদামী না করে আমি যেই দাম দিতে পারবো, সেই দামে দিয়ে দেন।
এই সময় একজন চাচা মিয়া টাইপের বয়স্ক লোক দোকানের পেছনের প্রান্ত থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, ম্যাডাম কি শুধু নিজের জন্যই নিবেন না অন্য কারো জন্যও নিবেন?
আমার জন্য নেব, তাছাড়াও আমার মা আর বোনদের জন্য।
এতোক্ষণে চটুল টাইপের দোকানদারটি ভালো কিছু শাড়ি বের করে দেখাতে শুরু করল এবং আমার কয়েকটা পছন্দও হলো। ওরা যখন মোটামোটি নিশ্চিত হল যে আমি বেশ কয়েকটা শাড়ি উনাদের থেকে সত্যিই কিনবো তখন একজন জোরে হাঁক দিলো,
এই পিচ্চি, আপুদের জন্য কফি নিয়ে আয়। সেই সাথে দুই প্লেট ফুচকা।
পিংক সিটির ফুচকা খুবই মজা এবং আমরা যারা বিদেশ থেকে যাই তাদের জন্য নির্দ্বিধায় স্বাস্থ্য সম্মত। পেট খারাপের কোন ভয় নেই। আমি ভেবেছিলাম, শাড়ি কেনা শেষ করে আমরা দুই বান্ধবী মিলে ফুচকা খাবো। তা শাড়িওয়ালাই যখন খাওয়াচ্ছে তখন মন্দ কি। শাড়ি কিনতে কিনতে এসি করা রুমের ভেতর বসে ফুচকা খাওয়ার অনাবিল আনন্দ উপভোগ করলাম।
লেখা শেষ করার আগে বলে নেই, দামাদামি করার চক্করে আমার খুব বেশীক্ষণ থাকতে হয়নি। অল্প কিছুক্ষণ বাক বিতণ্ডার পরে, আমার চাওয়া আর ওদের চাওয়া দামের মাঝামাঝি একটা জায়গায় এসে আমরা দুই পক্ষই ইস্তফা দিয়েছিলাম। দামাদামী থেকে এতো সহজে যে পার পাবো ভাবতেই পারিনি।
এর আসল কারণটা ঠিক জানা নেই তবে আন্দাজ করেছিলাম। হতে পারে, অনেক বছর ধরে বিদেশে থাকার সুবাদে আমার কথাবার্তায় প্রকাশ পেয়েছিল কিছু ভদ্রতা মিশ্রিত সরলতা, শাড়ির বাজার সম্পর্কে অনভিজ্ঞতা, শাড়ি বিক্রেতাদের প্রতি সম্মান সূচক আচরণ অথবা অন্য কোন কিছু, যা সচরাচর দৈনন্দিন বেচাকেনায় শাড়ি ওয়ালাদের নজরে পরেনা।
এক কি দুই বছরে মাত্র একবার শাড়ি কিনতে, বিদেশ থেকে আসা ম্যাডামের মনে ওরা একটা ভালো ইম্প্রেশন তৈরি করতে চেয়েছিল। ওরা আমাকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেছিলো, আমেরিকা থেকে প্রতিবার দেশে এলে যেন ওদের দোকানে শাড়ি কিনতে আসি...
What an entertaining topic. Enjoyed readying your narrative based on saree purchasing experience....as not only was it amusing it also explains the drama and the psychological command our saree sellers hold on us.
ReplyDeleteWhat stands out for me that without having any institutional training or background these saree sellers are so psychologically attuned....absolutely amazing
বাহ বেশ মজার একটা দৃশ্য উপভোগ করছিলাম তোমার লেখাতে। মনে হচ্ছিলো আমি স্বচক্ষে সব দেখছি। খুব ভাল লাগলো।
ReplyDeleteYou have accurately portrayed the saree shopping scenario here in Bangladesh! The shopkeepers are indeed well trained and knowledgeable in terms of identifying the various types of shoppers and giving them customised service as per their needs. Great read!
ReplyDeleteFantastic! It is truly motivational. I really appreciate the way how you dealt with the sellers. Actually they should learn how to behave with local customers and women. The thing which made me most astonished is they can read the mind of consumers!
ReplyDelete