জন্মদিন ও মা

দেশে ভয়াবহ রকমের করোনা পরিস্থিতি। চারিদিকে এতো দুঃসংবাদ আর মৃত্যুর খবর প্রায়শই মন খারাপ করে দিচ্ছে। ভেবেছিলাম এই বছরটা অন্য রকম হবে, গত বছরের মত নয়। কিন্তু এখনো নিশ্চিত হতে পারছিনা, কবে হবে বা কিভাবে হবে। এতো কিছুর মধ্যে জন্মদিন অনুধাবন করা আরও বেশী কষ্টসাধ্য। নিজের জন্মের দিনটাতে স্পেশ্যাল ফিল করার পরিবর্তে আল্লাহর প্রতি অনেক বেশী শুকরিয়া আর কৃতজ্ঞতা অনুভব হচ্ছে, যে এখনো আমি এবং আমার কাছের ও দূরের পরিবারের সকলে ভালো আছি, সুস্থ আছি।

খুব ছোট বয়সে আমি আমার বাবাকে হারাই। যে বয়সে মেয়েরা একটু একটু করে বাবাকে চিনতে শেখে আর মেয়ের সাথে বাবার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, ঠিক সেই বয়সে। তো আমি সব সময় খুব মন খারাপ করে থাকতাম। মা আমার মন ভোলানোর জন্য আমাকে খুশী করতে, বিরাট বড় করে আমার জন্মদিনের অনুষ্ঠান করেছিলেন। 

আমার তখন ছয় কি সাত বছর বয়স। উফ, সে কি আনন্দ আমার। কেকটা কেমন হবে, আমি কোন জামাটা পরবো নাকি নতুন জামা বানানো হবে, কে কে অতিথি আসবে, কত রঙের বেলুন লাগানো হবে, কি কি উপহার পাবো... এরকম অনেক কিছু ভাবনা নিয়ে,অনেক দিন ধরে চলেছিল আমার জল্পনা, কল্পনা। 

অবশেষে সেই বিশেষ দিনটি এসেছিল - ১২ই এপ্রিল। সারা দুনিয়ার যতো আনন্দ, যতো ভালো লাগা, যতো হৈচৈ, যতো উৎসব সব যেন আমাকে ঘিরেই চলছিল। কেক কাটার আগে আমি অপলক দৃষ্টিতে, মুগ্ধ নয়নে শুধু ওটার দিকে তাকিয়েই ছিলাম। ভয় হচ্ছিল, কেক কাটলেই যদি জন্মদিন শেষ হয়ে যায়। শৈশবের রঙিন স্মৃতি গুলির মধ্যে এটি আমার অন্যতম একটি স্মরণীয় স্মৃতি। এরপর বহু জন্মদিন গিয়েছে, বহু ১২ই এপ্রিল, কিন্তু অমন মন কাড়া অনুভূতি আর হয়নি।

আমরা যখন বড় হয়ে যাই অথবা বার্ধক্যের দিকে এগুতে থাকি, তখন কিন্তু জন্মদিন প্রতি বছর তার বৈশিষ্ট্যের ধরন বদল করতে থাকে। জন্মদিন তখন হয়ে যায় পরিবার এর সাথে ডিনারে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারা, ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে উপহার পাওয়া, প্রিয়জনের সাথে লং ড্রাইভে যাওয়া অথবা অফিসের কলিগদের সাথে কেক কাটা। 

আর এগুলোর পাশাপাশি, দিনটিকে আরও বিশেষ মহিমায় সজ্জিত করে এ যুগের সোশ্যাল মিডিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে একই দেশে, অন্য দেশে, নিকটবর্তী, দূরবর্তী সারা পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে আপনজনদের কাছ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা মেসেজ পৌঁছে যায়। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী সকলের পাঠানো শুভ কামনা ও ভালোবাসায় ভরা মেসেজ গুলো পড়তে খুব ভালো লাগে। নিজেকে বিশেষ কেও হিসেবে মনে হয়। 

সেই সাথে আরও একটি কথা মনে হয়। সবার পাঠানো এই আনন্দ বার্তাগুলো শুধু আমার একার জন্য নয়, বরং আমার মায়ের জন্যেও। যিনি আমাকে কষ্ট করে জন্ম দিয়েছেন, পরম মমতায় বড় করেছেন। যার জন্য এই পৃথিবীর আলো প্রথম দেখেছি। এ দিনটি শুধু আমার জন্মের দিন নয়, আমার মায়ের কষ্ট আর আত্মত্যাগের দিনও। তাই এ দিনটির কৃতিত্ব শুধুমাত্র তাঁর, এ লগনের মাহাত্ম্য শুধুমাত্র তাঁর। জন্মদিনের শুভেচ্ছা তাঁর জন্যেও।  

 ১২ই এপ্রিলে, হাজার মাইল দূর থেকে যখন দেশে মা'কে ফোন করি তখন বলি, 'আজ আমার জন্মদিন, মনে আছে তোমার?... শুভ জন্মদিন, মা।'
 
ফোনের ওপার থেকে মা'র স্নেহ ভরা কণ্ঠ ভেসে আসে, 'তোমার জন্যে রইল অনেক ভালোবাসা আর দোয়া।'  অশ্রুসিক্ত নয়নে আমি মন ভরে সেই কণ্ঠস্বর শুনি।        

Comments

  1. Lucidly written beautiful tribute! May you stay blessed always.

    ReplyDelete
  2. শুভ জন্মদিন, ভাল লাগল তোমার জন্মদিন নিয়ে লেখাটি। ভালো থেকো।

    ReplyDelete
  3. Memories are full of special thoughts and emotions, which can replenish us massively, if we can treasure it beautifully as you have done. A beautiful note and a tribute to Mum on your birthday

    ReplyDelete
  4. Belated happy birthday. Birthdays are special, especially when your parents make your feel like a queen - your article conveys this message.

    ReplyDelete
  5. Straight from the heart. May the gift of your birth always be a blessing to you and your mother. Also, may your children feel similarly on their birthdays!

    ReplyDelete

Post a Comment