একটি শুভেচ্ছা পত্র

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে, সাপ্তাহিক ঠিকানা পত্রিকার বিশেষ ক্রোড়পত্রে ২৫ শে মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে আমার একটি চিঠি। 

'প্রিয় বাংলাদেশ',

তোমার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে জানাই আমার প্রাণ ঢালা শুভেচ্ছা। কেমন আছো তুমি? পৃথিবীর মানচিত্রে ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে মুক্ত, স্বাধীন লাল সবুজের পতাকা ওড়াতে, কেমন লাগে তোমার? একটি সার্বভৌম দেশের নাগরিক হিসেবে তোমাকে জানাই হাজারো সালাম।   

কেমন কাটছে তোমার তারুণ্যে ভরা দিনগুলো? তুমি তো এখন চঞ্চলা, চপলা হরিনীর মত ছুটে চলেছ সম্মুখ পানে, ঊর্ধ্ব গতিতে, এক অব্যর্থ লক্ষ্যের দিকে।  অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গত তিন দশকে বিরাজমান তোমার অর্থনৈতিক প্রগতি ও সমৃদ্ধি, সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে। তোমার উন্নতি, তোমার সাফল্য দেখে পুরো দুনিয়া হতবাক। পৃথিবীর বড় বড় দেশরাও তোমাকে নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা করছে। তোমার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করছে। তোমার সাফল্য দেখে প্রতিবেশী দেশগুলোও ভাবছে, কি করে সম্ভব। এবার আর তোমায় ঠেকাবে কে?

ষোল কোটি মানুষকে তুমি ছায়া দিয়ে আগলে রেখেছ। তোমার সন্তানেরা আজ স্বাধীন দেশে, নিজের ভাষায় কথা বলে। নিজেদের পরিচয় দেয় বাঙালী বলে, কোন প্রতিবেশী দেশের পরিচয়ে নয়। এটি একটি বিরাট অর্জন। আগামী প্রজন্মের কাছে রেখে যাওয়া এক শ্রেষ্ঠ গল্প। '৫২ আর '৭১ এর কথাগুলো অনুরণিত হবে একাল থেকে ওকালে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। সবাই জানবে তোমার বীরত্বের কথা, আত্মত্যাগের কথা। লাখো শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারেনা।  

রূপ লাবন্যে, সৌন্দর্যে, মাধুর্যে তুমিতো অনন্যা। গাছপালা, পাহাড়, নদী, সমুদ্র, বনভূমি আর জীব বৈচিত্র্য নিয়ে তুমি তোমার পশরা সাজিয়েছ। অসংখ্য নদনদী যেমন জালের মত তোমার গায়ে বিছিয়ে আছে, তেমনি হরেক রকম ফুল, ফল আর শস্য নিয়ে ছয়টি ঋতুর সম্ভার তোমার সৌন্দর্য বর্ধন করে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, সিলেটের নয়নাভিরাম চা বাগান, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বা লবণাক্ত ভূমি সুন্দরবন, সুন্দরবনের রাজকীয় অলংকার রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, আর কোন দেশে গেলে মিলবে বলতো? তাইতো বহু দেশের পর্যটক, ভ্রমণপিপাসু আর শরণার্থীরা ভিড় করে তোমার অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখতে।

ঢাকাই মসলিন, জামদানী, তাঁতশিল্প, তোমার এক স্বর্ণ উজ্জ্বল গৌরবের ইতিহাস। নকশী কাঁথা, গ্রামীণ ঐতিহ্য ও লোকশিল্পের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গ্রামবাংলার বধূ-কন্যারা মনের মাধুরী মিশিয়ে শত বছরের গল্প, ইতিহাসকে যেমন সুঁই সুতোর ফোঁড়ে বাঁচিয়ে রাখে, ঠিক তেমনি গ্রামের নারী শ্রমিকেরা বাঁচিয়ে রাখছে তোমার অর্থনীতির চাকা। গার্মেন্টস কারখানা গুলো দিচ্ছে নারী শ্রমিকদের কর্ম সংস্থানের সুযোগ। পোশাক শিল্প আজ তোমার এক বৃহত্তর শক্তি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিশাল চাবি কাঠি। বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ আসছে গার্মেন্টস পণ্য রফতানির মাধ্যমে। তোমার সন্তানেরা আজ বিদেশের মাটিতে কাজ করে দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করছে। দক্ষ জনশক্তি রফতানি তোমার এক সুঠাম হাতিয়ার। তোমায় ছেড়ে দূর দূরান্তে যারা ভিন দেশে চলে গিয়েছে, তোমার জন্য তাদের মন কাঁদে, প্রাণ কাঁদে। একবার তোমার কোলে ফেরত আসতে চায়।   

চার দশক আগে তোমায় নিয়ে যখন সবাই হেয় করতো, তোমায় স্বাবলম্বী দেখতে অনিশ্চয়তায় ভুগতো, তখনও তুমি থেমে থাকনি। আস্তে আস্তে, গুটি গুটি পায়ে, উন্নয়নের পথে অগ্রসর হয়েছ। সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা প্রণালীতে ব্যাপক পরিবর্তনের মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার কমিয়েছ, মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়িয়েছ। একেবারে ঘরে ঘরে তৃণমূল পর্যায়ে সকলের মধ্যে সচেতনতা এনেছ, নিজের এবং সমাজ সম্পর্কে। লেখাপড়া, পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা, মানসিক স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ব্যবস্থা, পরিবার পরিকল্পনা, সঠিক খাদ্য গ্রহন, মেয়েদের কর্ম সংস্থান, এমন বহু পরিবার ও সমাজ গঠন মূলক বিষয়ে আজ নারীরা অবগত। সুষ্ঠ পরিবার গঠন ও স্বাবলম্বী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আজ নারীরা বোঝে। আজ তুমি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বাণিজ্য সকল খাতে অল্প সময়ে, স্বল্প ব্যয়ে, কম পরিশ্রমে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে তথ্য ও সেবা। এতো এক যুগান্তকারী বিপ্লব। গড়ে উঠছে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, গড়ে উঠছে দক্ষ জনবল। বদলে যাচ্ছে তোমার পরিচয়। তুমি এক আধুনিক উন্নয়নশীল দেশ এখন।      

সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে তোমাকে একটি খোলা চিঠি দিলাম। সেই সাথে দিলাম আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসা, এই পঞ্চাশতম বার্ষিকীতে শুভ কামনা। তোমার সুবর্ণ চলার পথ আরও দির্ঘায়িত হোক। ভালো থেকো তুমি, আমার প্রিয় বাংলাদেশ।

ইতি,

তোমার এক গর্বিত কন্যা।           

Comments

  1. What a heart warming tribute! Absolutely overwhelmed. Your lucid writeup has made me feel as a true and blessed Bangladeshi. Your insights have made me realize how fortunate we are to have a nation progressing so well amidst so many adversities. Thank you with all my heart. Keep up your fantastic writings.
    Ardent admirer

    ReplyDelete
  2. What a fitting tribute to the homeland!

    ReplyDelete
  3. সুন্দর সহজ ভাষায় আমাদের দেশকে নিয়ে অনবদ্য লেখা।খুবই ভাল লাগল। ধন্যবাদ তোমাকে।

    ReplyDelete
  4. Thank you for writing such an inspirational letter to Bangladesh on our Golden Anniversary. The description in your letter proves how blessed we are as a nation with the cultural & artistic heritage, its remarkable development & progression so far and the abundance of the natural beauty.
    Proud to be a Bangladeshi

    ReplyDelete
  5. Fantastic elaboration. You have wonderfully written the letter. The way how you have analyzed about Bangladesh, its people, gaining independence, developmental sides, remarkable sights, and jamdani and muslin weaving industry was outstanding. You truly write in a very excellent and motivational way. Keep it up.

    ReplyDelete

Post a Comment