ক্যাকটাস ফুল
আমার ছেলে এসে জানালা দেখিয়ে আমায় বলল, Have you seen it, Ammu? জানালা দিয়ে বাইরে প্যাটিওতে চোখ দিতেই দেখলাম সেই হৃদয় বিদারক দৃশ্যটি। আমার ক্যাকটাস গাছটি খুব সম্ভবত আর বেঁচে নেই। প্রচণ্ড শীতের ভয়াল থাবা আর কনকনে ঠাণ্ডা তুষার ঝড়, গাছটিকে দুমড়ে, মুচড়ে শেষ করে ভূপাতিত করে দিয়েছে। যেন ওটি কোনদিন আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। কষ্টে চোখে পানি এসে গেলো।
এ বাড়ীতে আসার পর থেকেই এই ক্যাকটাস এর সৌন্দর্য দেখে আসছি। কত ছবি, কত স্মৃতি, কত ভালো লাগার অনুভূতি। মে মাসের মাঝামাঝি সদ্য গরম হয়ে ওঠা দিনগুলিতে, ঝুমকো ঝুমকো হলুদ ফুলে ভরে যেত গাছটি। হলুদ আর সবুজের এমন অপূর্ব সুন্দর যুগল বন্দী আগে কখনো দেখিনি। এ বাড়ীতে আসার পর থেকে প্রতি বছর মে মাসের বিশেষ দিনটিতে, Mother's Day তে, আমার পাওয়া সব থেকে প্রিয় উপহার ছিল এই ফুলগুলো।টেক্সাসে এ বছরের Winter একেবারেই অন্য রকম, অস্বাভাবিক।গতানুগতিক তো নয়ই। দু' সপ্তাহ আগে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া তীব্র তুষার পাত আর একক ডিজিটে নেমে যাওয়া তাপমাত্রা এবং টানা পাঁচ দিন এই নির্মম অবস্থার মধ্যে থাকা, টেক্সাস স্টেট এর প্রকৃতিতে এক বিশাল পরিবর্তন এনেছে । বড় গাছেরা জরাজীর্ণ অবস্থায় মলিন থেকে মলিনতর হয়ে কোন রকমে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝারি সাইজের ঝোপগুলো আর ছোট গাছেরা দাঁড়িয়ে আছে ঠিকই, তবে তাদের রং সবুজ থেকে পুরোপুরি খয়েরিতে রুপান্তরিত হয়েছে। তাদের চির পরিচিত এই আবাস ভূমির চেহারা একেবারে পাল্টে গেছে।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওদের দিকে যখন তাকালাম, মনে হল গাছগুলো হতবাক আর স্তব্ধ। ওরা যেন আমাকে নীরবে ওদের যন্ত্রণার কথা বলছে। বলছে...এমন তো আগে কখনো দেখিনি। শীতের এই তীব্রতা কখনো সহ্য করিনি। আমরা, এই গরম অঞ্চলের গাছেরাতো এই বৈরী আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্য প্রস্তুত নই। কি করবো আমরা? আমাদের চিরচেনা প্রকৃতি কেন পাল্টে যাচ্ছে? প্রকৃতি কেন তার স্বাভাবিকতা হারাচ্ছে?...এর নামই কি জলবায়ূ পরিবর্তন?জলবায়ূ পরিবর্তন বা Climate Change সারা পৃথিবীতে এক অসম্ভব অস্থিরতা তৈরি করেছে। নগরায়ন, শিল্পায়ন আর পরিবেশ দূষণ এর কারনে পৃথিবীর সামগ্রিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তর আর দক্ষিন মেরুর বরফ আগের চাইতে বেশী গলতে শুরু করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের Local Season বা Weather Pattern এ বড় পরিবর্তন আসছে। যেখানে যেটা ঘটবার নয়, তাই ঘটছে - যেখানে যেটা ঘটবার কথা, ঘটছে না। ঘন ঘন বন্যা, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, খরা, গ্রীষ্মের দাবদাহ এসবেরই প্রতিফলন। জীবজন্তু, গাছপালা, সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবন এখন হুমকির মুখে। কে বাঁচাবে পৃথিবী নামক আমাদের প্রিয় এই গ্রহটিকে?
বিশ্ব জুড়ে কিছু প্রকৃতি প্রেমী মানুষ জোরে সোরে জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। তাদেরকে বলা হয় Climate and Environmental Activist। তাদেরই মুখ্যমণি হল Greta Thunberg। ১৭ বছর বয়সী সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ এর স্কুলে যেতে মন চাইতো না। কারন সে ছিল সামাজিক শৈলীতে একেবারে আনাড়ি। ডাক্তারি ভাষায় যার নাম Asperger's Syndrome। স্কুলের সহপাঠীরা যখন তাকে নিয়ে মজা করতো, হেয় করতো, তার মাথায় চিন্তা ঘুরত কি করে এই দুনিয়াতে পরিবর্তন আনা যায়। মানব জাতির কল্যাণ করা যায়। নোবেল পুরুস্কার বিজয়ী দাদার নাতনী হয়ে, আট বছর বয়সেই গ্রেটা প্রথম জলবায়ূ পরিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞ্যান লাভ করে। এরপর ২০১৮ সালে ১৫ বছর বয়সে, একটি লোকাল পত্রিকায় জলবায়ূ পরিবর্তনের উপর রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরুস্কার লাভ করে। ব্যস, তারপর থেকেই স্কুল কামাই করে মেয়েটি যেতে শুরু করে জলবায়ূ পরিবর্তনে প্রতিবাদ মুখর আন্দোলন গুলোতে। যেতে শুরু করে জনসমাবেশ, কনফেরেন্স গুলোতে।
২০১৯ সালে নিউইয়র্ক এর জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত Climate Change Meeting এ প্রভাবশালী বিশ্ব নেতা/নেত্রীদের সামনে, গ্রেটা এক সাড়া জাগানো ভাষণ দেয়। সবাইকে কটাক্ষ করে বলে, পরিবেশ বাঁচানোর এই দায়ভার শুধু তরুণ প্রজন্মের নয়। বরঞ্চ সকলের। কিছু মানুষের স্বার্থ সিদ্ধি আর ব্যবসা কেন্দ্রিক মনোভাবের কারনে, পুঁজিবাদীর কারনে আজ গোটা দুনিয়া যেই বিপদ্গামী পথে চলেছে, সেখান থেকে ফিরে আসার ব্যবস্থা নেয়া খুবই জরুরী। গ্রেটার এই জনহিতকর আন্দোলনে আজ বিশ্বব্যাপী মানুষ যোগ দিয়েছে । আজকের তরুণ সমাজ তথা Generation Z এর মিলিয়ন মিলিয়ন পরিবেশ সচেতন ছেলেমেয়েরা, গ্রেটার একনিষ্ঠ ফলোয়ারস।ক্যাকটাসের দুঃখ এখনো ভুলতে পারিনি। আবার বেঁচে উঠবে কিনা জানিনা। টিভির মূল খবর চ্যানেল গুলো শহরবাসীকে জানিয়েছে, আমরা যেন বাগানের গাছগুলোকে কিছু দিন সময় দেই। গাছেরা প্রচণ্ড ভাবে shocked and traumatized । কিছু দিন পরে এটা যদি কাটিয়ে উঠতে পারে, হয়তো তখন ওরা বেঁচে উঠবে। মে মাসের দিনগুলোতে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমার প্রিয় ক্যাকটাস।
সেই অপেক্ষায় রইলাম.....
This extreme weather changes is costing us a great deal. As an inhabitant of this beautiful world we all have our own duty to play, do the right thing to save planet Earth from further jeopardy.
ReplyDeleteI am heart broken to know about your Cactus. Really hope this beautiful plant regrows.
প্রকৃতির এই পরিবর্তনে সমতা আনার জন্য যে দায়ভার তা আমাদের সকলের, এই কথাটিই আমাদেরকে বুঝতে হবে। একটি কিশোরী সেই হালটি হাতে ধরেছে। এ এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তোমার ক্যাকটাসের সাথে কথা বল, ওরা সে কথায় সাড়া দেবে।
ReplyDelete