অপরাধ যখন বিজ্ঞান মানে না
খুব আশ্চর্য হলেও সত্যি যে এই করোনা আক্রান্ত পৃথিবীতে কোন কিছু থেমে নেই। পৃথিবী এগিয়ে চলেছে তার নিজস্ব নিয়মে। প্রতিদিন ঘটে চলেছে অন্যায়, অপকর্ম, অনিয়ম, অবিচার আর সেই সাথে অসংখ্য মানুষের আহাজারি। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলেছে ছোট, বড় অসংখ্য অপরাধ। কারন অপরাধ বৃত্তি মানুষের একটি আদি প্রবণতা।
মানুষ সুযোগ সন্ধানী। করোনা নামক খুব ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস যখন সারা পৃথিবীতে প্রচণ্ড প্রতাপের সাথে শাসন করে বেড়াচ্ছে আর তার ভয়ে বড় বড় বিজ্ঞানীরা দিন নেই, রাত নেই অবিরাম গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঠিক সেই সময়টাতেই, অপরাধ জগত খুব সক্রিয় ভাবে তৎপর।
অপরাধের ধরন গুলো কম বেশী পালটেছে। ঘরে ঘরে ঘটে চলছে পারিবারিক নির্যাতন বা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিশু আর নারীদের প্রতি নির্যাতন এর হার প্রতিদিন বেড়ে চলেছে। শক্ত, সবল পুরুষ জাতি তাদের রাগ, ক্ষোভ, হতাশা, দুর্দশা অথবা দিনের পর দিন বাড়িতে থাকার একাকীত্ব, সুযোগ পেলেই বিভিন্ন উপায়ে তার স্ত্রী, বান্ধবী, সন্তান অথবা কোন পারিবারিক সদস্য এর উপর অত্যাচার করে পুষিয়ে নিচ্ছে। আর্থিক সমস্যা, চাকরী হারানো, মানসিক চাপ অথবা অসামাজিক জীবন যাপন - যে কোন একটি বা অধিক কারন, এই নির্যাতন প্রবণতার মূল উৎস হিসেবে ধরা হচ্ছে। ঘরের ভেতর বন্দী অসহায় নারী বা শিশুর আর্তনাদ শোনা বা সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। অসহায়ত্বের একশো ভাগ সুযোগ নিচ্ছে মানুষ রূপী হায়েনারা।
সাইবার অপরাধ অনেক দেশেই ধরা ছোঁয়ার বাইরে। করোনা চলাকালীন সময়ে হোম অফিস বা বাসায় বসেই অধিকাংশ মানুষ কাজ করছে আর ব্যবহার করছে বিভিন্ন প্রযুক্তি। সাধারন মানুষের ও সময় কাটছে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার এর মধ্য দিয়ে, তা সে মোবাইলে হোক বা কম্পিউটার এ। এরকম অনেকেই হচ্ছে সাইবার ক্রাইমের শিকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এ ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল গুলোতে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচার এবং মেসেজ পাঠিয়ে প্রতারণার ঘটনা অহরহ ঘটছে।
দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলেছে সন্ত্রাসী আক্রমণ। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন গুলো তাদের কার্যক্রম কমিয়ে আনলেও একেবারে বন্ধ করে দেইনি। গত মে মাসে পরপর অনেকগুলো আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে আফগানিস্তানের বুকে। এদিকে মাদক পাচারকারী আর চোরা চালানী দল গুলো ও বসে নেই। করোনা নামক এই মহামারীর সুযোগ তারাও নিচ্ছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর বোতলে ভরে আমদানি করা হচ্ছে বিভিন্ন মাদক দ্রব্য আর নেশা কারক বস্তু।
এছাড়াও হচ্ছে চুরি, ডাকাতি, জালিয়াতি, প্রতারণা। হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা, আইন অমান্য করা, জিনিস পত্র বা সম্পত্তি ভাংচুর করা। হচ্ছে বর্ণ বৈষম্য এর কারনে পুলিশই হামলা, হয়রানি অথবা একেবারে সরাসরি হত্যা। করোনাকে পুঁজি করে তৈরি হচ্ছে জাল ডাক্তারের সার্টিফিকেট, নিম্ন মানের মাস্ক, পিপিই অথবা ক্ষতিকারক ক্লিনিং সামগ্রী।
যারা কোন অপরাধী চক্রের সাথে জড়িত নয় অথবা দৈনন্দিন অপরাধ করে অভ্যাস নেই, তারাও সুযোগ পেলে মনের ক্ষার মেটাতে কাউকে গালি দিচ্ছে অথবা কারোর গায়ে থুথু ছিটিয়ে বলছে, আমি করোনায় আক্রান্ত, তাই তোমাকেও দিলাম। সমগ্র বিশ্ব জুড়ে চলছে এক নজীর বিহীন অপরাধ প্রতিযোগিতা।
সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীতে এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন আমাদেরকে। একটি অদৃশ্য অথচ অসম্ভব শক্তিশালী ভাইরাস বা জীবাণু, আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে। নীরবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে একজন থেকে আর একজনে। ভাইরাসটি মানছে না ধনী, গরীব, পুরুষ, মহিলা, নির্দোষ কিংবা অপরাধী। এর ফলশ্রুতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ আজ অকাতরে প্রান হারাছে, অসুস্থ হচ্ছে, প্রিয়জনকে হারাচ্ছে। হারাচ্ছে সামাজিক অবস্থান, আর্থিক সচ্ছলতা, জীবনের নিরাপত্তা।হায়রে মানব জাতি! নানা প্রতিকূলতার মাঝেও অপরাধী মন, নানা উপায় বের করে যাচ্ছে অপরাধ করবার। মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে, ওরা কি মানুষ নাকি মানুষ এর বেশ নিয়ে কোন ভয়ঙ্কর প্রাণী? এই প্রাণী গুলোর হৃদয় কি একটুও কাঁপে না? অপরাধ করবার আগে কি একবার ও মনে হয়না, এই জীবনটা তো খুবই ক্ষনস্থায়ী। চোখ দুটো বন্ধ করলেই তো সব শেষ।
Another great topic you have tackled. Appreciate the way you have demonstrated the impact and effect of Covid 19 has made on the human race and the society overtly and covertly.
ReplyDelete